মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আজ: বাঙালির গৌরবময় শোকের দিন

Ahmed Ihtisham
0

 

বাঙালি জাতির চেতনায়-মননে অনন্য মহিমায় চিরভাস্বর মহান একুশে, ২১ ফেব্রুয়ারি আজ। একুশে ফেব্রুয়ারি মানে মাতৃভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেওয়ার ইতিহাস, বাঙালির গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের শোকার্ত দিন। ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, সফিউরের রক্তে রাঙানো দিন আজ।

ekushe minarফুলে ফুলে ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ

Loaded8.46%

আজ ২১ ফেব্রুয়ারি বায়ান্নের রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস; আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি...’ বুকে শিহরণ জাগানো এ গানে একইসঙ্গে আজ শোক ও গৌরবের বার্তা ধ্বনিত হবে আকাশে-বাতাসে। প্রভাত ফেরিতে হাতে ফুল নিয়ে ভাষা শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে জাতি।

বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি আদায়ের আন্দোলন করতে গিয়ে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন বাংলার দামাল ছেলেরা। তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা পেয়েছে রাষ্ট্র ভাষার স্বীকৃতি। এরপর থেকে ভাষা শহীদ দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। পরবর্তী সময়ে ২১ ফেব্রুয়ারি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।

২১ ফেব্রুয়ারি বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীক। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, সেই পথ ধরেই একাত্তরে গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন দেশ হিসেবে জন্ম নেয় লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য খুলে দেওয়া হয় শহীদ মিনার।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৯৯ সালে দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। পরের বছর অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮ টি দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় একযোগে পালিত হয়ে আসছে দিবসটি।

সেদিন কি ঘটেছিল: ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর পল্টন ময়দানে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা দেন ‘উর্দু এবং শুধু উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ মূলত নাজিমুদ্দিনের এ বক্তব্যই সেদিন ভাষা আন্দোলনের দাবানল তৈরি করে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাংলার ছাত্র-শিক্ষকসহ আপামর জনতা। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ।

একুশে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে ছাত্র-জনতা। মিছিলটি ঢাকার পলাশীর আমতলায় (বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণ) এলে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। এতে নিহত হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা অনেকে। এতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। অবশেষে বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি।

Post a Comment

0 Comments
Post a Comment (0)
To Top